খুদে গোয়েন্দার অভিযান (শহীদ সাবের)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - আনন্দপাঠ | NCTB BOOK
4k
Summary

একদিন খোকা স্কুল থেকে ফিরে আসার পথে একটি গলিতে অসাধারণ একটি ঘটনার সাক্ষী হয়। গলির অন্ধকারে সে একটি পুরোনো বাড়িতে কিছু লোকের মধ্যে ভয়ানক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, যেখানে এক ব্যক্তিকে রিভলবার দ্বারা হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।

খোকা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে কিন্তু দ্রুত সাহস জোগাড় করে লোকটিকে বাঁচানোর চিন্তা করে। সে একজন যুবক গোয়েন্দা চরিত্রের উদাহরণ হিসেবে নিজের আপনাকে তুলে ধরতে চায়। মনের মধ্যে পরিকল্পনা করে সে থানা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং এক পুলিশ কর্মকর্তা ও তার কনস্টেবলদের সহায়তা চায়।

থানায় গিয়ে খোকা অফিসারকে পুরো ঘটনা জানায়। অফিসার ঘটনাস্থলে যেতে প্রস্তুত হন। খোকা এবং পুলিশ সেখানে পৌঁছে একটি নাটকের মহড়া দেখতে পায়, যেখানে কাছাকাছি ভিন্ন পরিস্থিতি ছিল।

পুলিশ এবং খোকা টহল দিয়ে যায় এবং অবশেষে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। ঘটনাটি সংবাদে প্রকাশ পায় এবং খোকার সাহসিকতার প্রশংসা করা হয়। খোকা বিভিন্ন গোয়েন্দা গল্প এবং বইয়ের প্রেমী, যা তার সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তায় ভূমিকা রাখে।

স্কুল থেকে বেরিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সেদিন সন্ধ্যা হয়ে গেল, ছোট্ট একটি গলির ভেতর দিয়ে আসছিল খোকা, অন্ধকার হয়ে এসেছে, গলির ভেতরটাতে আরো অন্ধকার, এদিকটায় গ্যাসবাতি জ্বলে, আর সেই গ্যাসের আবছা আলোয় পথ চিনে যেতে বেশ অসুবিধে।

গলির মাঝামাঝি এসেই হঠাৎ কী একটা শব্দ এল তার কানে, থমকে দাঁড়ায় খোকা। এক মিনিট মাত্র, তারপরই একটা অসম্ভব চিন্তায় বুকটা তার ধড়াস করে উঠল, ভয়ে হাঁটু দুটো কাঁপছে তার। সে ভাবতে লাগল, কী করবে? কী তার করা উচিত? ইতস্তত করতে লাগল খোকা।

কিন্তু বেশিক্ষণ এই অবস্থা রইল না। ধীরে ধীরে মনে সাহস ফিরিয়ে আনল সে। তার মনে হলো- এই মুহূর্তে সে যেন একটা বিরাট কর্তব্য করতে যাচ্ছে। অসীম সাহসে বুক বেঁধে সে পা টিপে টিপে এগোলো।

পাশেই একটা পুরোনো একতলা বাড়ি। বাড়িখানার প্রায় ভেঙে-পড়া দশা। তা হলেও খোকা বেশ বুঝতে পারল ওর ভেতরে লোক থাকে। একটু ভেতরের দিকের একটা কামরাতে টিমটিমে বাতি জ্বলছে- তারই একটুখানি আলো এসে পড়েছে রাস্তার ওপর। খোকা পা টিপে টিপে সেই আলো লক্ষ করে এগোলো।

খুব সন্তর্পণে পা ফেলে খোকা এসে দাঁড়াল জানালার কাছে। জানালাটা বন্ধ। কিন্তু কাঠের ফাঁক দিয়ে চোখ রাখলে ঘরের ভেতরটা বেশ দেখা যায়। একবার দৃষ্টি দিয়েই শুকিয়ে উঠল খোকার অন্তরাত্মা।

দেখল ঘরের ভেতর একপাশে একটা ভাঙা লণ্ঠন জ্বলছে। আবছা আলোয় দশ-বারো জন লোক বসে আছে।

তাদের সবাইকে ভালো করে দেখা যায় না। তবু যা দেখল তাতেই খোকার প্রাণ যায় যায়।

একটা লোক হতভম্বের মতো ঘরের মধ্যে একটা চেয়ারে বসে আছে আর একদল লোক দাঁড়িয়ে আছে সামনে, একজনের হাতে রিভলবার।
বাকি লোকগুলো ওকে ঘিরে রয়েছে।
চেয়ারে উপবিষ্ট লোকটা বলছে, 'না, ও কাজ আমাকে দিয়ে হবে না।'
রিভলবারধারী কঠিন দৃঢ়কণ্ঠে বলল, 'করতেই হবে তোমাকে। নইলে দেখতেই তো পাচ্ছ-!'
রিভলবারটা একবার নাড়ল সে।
'একটুও শব্দ হবে না, একেবারে আধুনিক যন্ত্র, সামান্য একটু হিস। তারপরেই ব্যস।'
কিন্তু লোকটার কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না, মনের বল তারও কম নয়।
নিরুত্তর বসে রইল লোকটা।
তাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে অস্ত্রধারী আবার বলল, 'শোনো তেওয়ারি, আধঘণ্টা সময় দিলাম তোমাকে।
এর মধ্যে মনস্থির করো। এই রইল কাগজ-কলম। শুধু একটা সই, নইলে আধঘণ্টা পরে আত্মারাম আর খাঁচায় থাকবে না।'
হঠাৎ চেতনা ফিরে এলো খোকার।

আর মাত্র আধঘণ্টা। আর মাত্র আধঘণ্টা। তার পরেই একটা প্রাণ ঢলে পড়বে মৃত্যুর কোলে। খোকার মনের মধ্যে খেলে গেল হঠাৎ আলোর ঝলকানি। না, আর এখানে নয়, খোকা ভাবল। এন্তে নেমে এল সে জানালা থেকে।

পা টিপে টিপে গলি থেকে বেরিয়ে খোকা দিল এক দৌড়। এক দৌড়ে এসে পড়ল রাস্তার মোড়ে।

বগলে বই চেপে সে ভাবতে লাগল, কী করবে এখন। কোথায় যাবে? খোকার মনে হলো যেমন করেই হোক লোকটাকে বাঁচাতে হবে। কিন্তু কেমন করে? স্কুলে থার্ড ক্লাসের ছাত্র সে। বয়স্ক লোক যদি হতো, বন্ধুবান্ধব জুটিয়ে সে নিজেই উদ্ধার করত লোকটিকে।

বড়ো রাস্তায় অনেক আলো। ভয় তার কেটে গেল অনেকটা। ধীরে ধীরে ফিরে আসতে লাগল সাহস।
হ্যাঁ, সাহস করে এগোতে হবে তাকে। এমন একটা কর্তব্য তাকে করতে হবে যা কতদিন ধরে সে কল্পনা করে এসেছে।

চট করে তার মনে পড়ে গেল তার প্রিয় বইয়ের অতি পরিচিত মানুষগুলোর কথা। সত্যেন ঘোষ। ডিটেকটিভসত্যেন ঘোষ হওয়ার এটাই সুযোগ।
কিন্তু খোকা ভাবল সত্যেন ঘোষ তো বয়স্ক বুড়ো লোক। সে বরং তার সাগরেদ তরুণ সুব্রত হতে পারে। ঠিক।
সে হলো সুব্রত। শক্তিমান, বলিষ্ঠ নির্ভীক সুব্রত। কোনো চালাকি তার কাছে খাটে না। প্রত্যেকটা খুনি তার কাছে ধরা পড়ে। যারা পড়ে না তারা অসাধারণ। কিন্তু খোকাকে এবারে সে দুঃসাহসিক কাজের বিবরণ পড়াই নয়, এবার হাতে-কলমে এগোতে হবে। এতদিন সে বীরের কীর্তিকলাপের কাহিনি পড়েই এসেছে, এবার সে নিজেই বীর হবে।

কিন্তু এখন কী করা যায়? মাথায় তার বুদ্ধিও আসছে না। দীনেন রায়ের ব্লেক যদি এই অবস্থায় পড়তেন, তা হলে কর্তব্য ঠিক করতে তার এক মুহূর্তও দেরি হতো না। অথচ সময় খুব কম। না, আর দেরি করা চলে না। মাত্র আধঘণ্টা সময়, তার মধ্যে আবার পাঁচ মিনিট ইতোমধ্যেই কেটে গেছে।

তাই তো! লোকটাকে বাঁচাতে হবে যে! সেই আধঘণ্টা কাটবার আগেই আচমকা হানা দিয়ে লোকটাকে বাঁচাতে হবে মৃত্যুর কবল থেকে। সে ভাবতে লাগল সত্যেন ঘোষ এরকম অবস্থায় পড়লে কী করতেন। ভাবতে ভাবতে তার মনে হলো এমন অবস্থায় তার কর্তব্য হচ্ছে একজন ইন্সপেক্টার সঙ্গে করে সরাসরি ঘরে গিয়ে হানা দেওয়া। ঠিক।

কিন্তু ইন্সপেক্টার কোথায় থাকেন, তাও যে তার জানা নেই।
পাশ দিয়ে যাচ্ছিল একটা লোক। খোকা ভাবল, সমস্ত ব্যাপারটা একে খুলে বলাটা কেমন হবে?
বিপদ আছে তাতে। এসব আনাড়ি লোক হয়ত চেঁচামেচি করে সব মাটি করে দেবে। টের পেয়ে পাখি ততক্ষণে উড়েই যাবে।

তবে হ্যাঁ, ইন্সপেক্টারের খোঁজটা ওর কাছ থেকে নেওয়া যেতে পারে। চট করে বুদ্ধি খেলে গেল তার মাথায়।
লোকটার সামনে গিয়ে সে খুব বুদ্ধিমানের মতো জিজ্ঞেস করল, 'আচ্ছা এখন কয়টা বাজে বলতে পারেন?' লোকটা একটু অবাক হলেন। তারপর হেসে বললেন, 'সাতটা।'
খোকা একটু ভাবল।

'আচ্ছা, পুলিশের ইন্সপেক্টার কোথায় থাকেন বলতে পারেন?'
'কেন খোকা! পুলিশের ইন্সপেক্টার দিয়ে কী করবে?'
লোকটার কথায় খোকার রাগ হয় খুব।

খোকা ভাবে, লোকটা পেয়েছে কী তাকে, কত বড়ো একটা কাজ করতে বেরিয়েছে সে। যদি সফল হয় তা হলে কালকের প্রভাতী সংবাদপত্রগুলোতে বড়ো বড়ো অক্ষরে তার কীর্তিকথা প্রচার করা হবে।
লোকটার কথার জবাবে খোকা বললে, 'আমার দরকার। কোনো ইন্সপেক্টারের ঠিকানা জানা থাকলে দয়া করে বলুন।'

ভদ্রলোক একটুখানি চুপ করে থেকে তাকে বললেন, 'কেন, তুমি থানায় গেলে তো পারো।'
কথাটা মনে ধরল তার। থানায় রওনা হলো খোকা।
লোকের কাছে জিজ্ঞেস করতে করতে থানার পথ চিনে সোজা সে হাজির হলো থানার অফিসঘরে। সামনেই বসে ছিলেন ওসি।

দেখলেন বেশ একটা অল্পবয়স্ক ছেলে কী যেন বলবে মনে করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'কী খোকা, কী দরকার তোমার?'
আবার খোকা! মনে মনে বেজায় চটে গেল সে। কিন্তু মুখে শুধু বললে, 'অনেকগুলো লোক মিলে একটা লোককে খুন করছে।'
ওসির কাজই হলো অপরাধ যেন না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখা। কাজেই তিনি একেবারে লাফিয়ে উঠলেন।
'কোথায়? কেমন করে? তুমি কী করে জানলে?'

খোকা তাকে আদ্যোপান্ত ঘটনা খুলে বলল। সব শুনে ওসি মাথা নেড়ে বললেন, 'তাই তো।'
খোকার তখন সাহস আরো বেড়ে গেল।
সে বলল, 'শিগগির চলুন। এতক্ষণে হয়ত লোকটাকে ওরা মেরেই ফেলেছে।'

ওসি তখন জনাদশেক কনস্টেবল নিয়ে একটা জিপে গিয়ে উঠলেন।
জিপ গাড়িটা ছুটে চলেছে। খোকার তখন কী আরাম। সামনে ড্রাইভারের পাশে বসেছে খোকা। দুরু দুরু কাঁপছে তার বুক। কত বড়ো একটা অভিযানে চলেছে সে। তার মনে হয় ওদের জিপটা যদি অন্য একটা জিপকে অনুসরণ করত তাহলে বেশ হতো। শাঁই শাঁই করে বেরিয়ে যেত এক-একটা গাড়ি। অবশেষে অপরাধীর গাড়িটা ধরে ফেলত তারা।

সেই গলির মোড়টা এসে পড়তেই খোকা বলল, 'থামুন, এইখানে।'
হুড়মুড় করে নেমে পড়ল সবাই।
খোকা বলল, 'সাবধানে পা টিপে টিপে আসুন, নইলে- ফুডুৎ।'
খুব সন্তর্পণে এগিয়ে সেই একতলা বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়াল তারা। ভেতরে তখনও আলো জ্বলছে। আর ঘর থেকে ভেসে আসছে তুমুল হাসির সাড়া। জানালার কাছে এসে খোকা উঁকি মারল।
ওসিকে ফিসফিস করে বললো, 'ওই ওরা।' ওসি এদিক-ওদিক তাকিয়ে, দুয়ারে আঘাত দিল। ভেতর থেকে ভেসে এল কর্কশ কণ্ঠস্বর, 'কে?'
'দুয়ার খোল।'

দুয়ারটা পরক্ষণেই খুলে গেল। একটা লোক বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, 'কী চান?'
খোকা দেখেই তাকে চিনতে পারল। সেই রিভলবারধারী।
'আরে এ যে দেখছি মমতাজ সাহেব।' ওসি হঠাৎ বলে উঠলেন, 'কী ব্যাপার?'
মমতাজ সাহেব বললেন, 'আমিও তো বলি কী ব্যাপার। আপনি যে হঠাৎ। তা আসুন আসুন, ভেতরে আসুন।'
মমতাজ সাহেবের পিছু পিছু সকলে ঘরে ঢুকল। ওসি সারাটা ঘর একবার ভালো করে দেখে নিলেন। তারপর চেয়ারের ওপর পড়ে থাকা কাগজপত্রগুলো দেখতে দেখতে হঠাৎ সশব্দে হেসে উঠলেন।
মমতাজ সাহেব ও তার সঙ্গীরা সকলেই তখন দারুণ হকচকিয়ে গেছেন। একসঙ্গে এত পুলিশ, দারোগা দেখে সকলের চোখ ছানাবড়া।
ওসির হাসি দেখে তারা ঘাবড়ে গেল আরো। ওসি তাদের ভয় ভাঙানোর জন্য বললেন, 'কিছু মনে করবেন না।
অসময়ে হানা দিয়ে আপনাদের কাজের ব্যাঘাত করলাম বলে। ব্যাপার কিছুই নয়। আমরা সবাই এসেছিলাম একটা অনুরোধ নিয়ে। আমরা যেন বাদ না পড়ি।'
মমতাজ সাহেব হেসে বললেন, 'নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই।'

তারপর কিছুক্ষণ খোশগল্প করে তারা ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। আসার সময় খোকাকে শক্ত হাতের মুঠোয় চেপে ধরতে ভুললেন না ওসি।
বাইরে এসে খোকাকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, 'মোহন কখানা পড়েছ বল দিকি?'
খোকা বুঝতেই পারল না ওসি কী বলছেন।
এ আবার কেমন রহস্য, সে ভাবল।

'মাথাটা তো গুলে খেয়েছ। তোমাদের নিয়ে যে কী হবে, তাই আমি ভেবে পাই না।' পরে খোকাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে এলেন ওসি।

পরদিন সংবাদপত্রে বড়ো বড়ো অক্ষরে নিচের ঘটনাটি বেরুল: গত ১৪ই অক্টোবর সন্ধ্যায় রাজামিত্র রোডের বাড়িতে আইঢাই অভিনেতা সঙ্ঘ যখন তাঁহাদের নূতন নাটকের মহড়া দিতেছিলেন তখন ফরাক্কাবাদের ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ তথায় গিয়া হানা দেয়। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, সৈফুদ্দীন ওরফে খোকাবাবু নামে এক বালক থানা পুলিশকে খবর দেয় যে, কিছু লোক মিলে অপর একটি লোককে খুন করিতে যাইতেছে। তাহারা সেই লোকটিকে কোনো একটি দলিলে স্বাক্ষর করিবার আদেশসহ আধঘণ্টার সময় দিয়াছে, এই আধঘণ্টার মধ্যে উক্ত দলিলে স্বাক্ষর না-করিলে তাহাকে রিভলবার দ্বারা হত্যা করিবার হুমকি দেওয়া হইয়াছে। বালকের নিকট হইতে এই মর্মে সংবাদ পাইয়া ফরাক্কাবাদের পুলিশ তথায় হানা দেয়। আরো জানা গিয়াছে যে, থানার ওসি তথায় গিয়া আইঢাই সংঘের প্রখ্যাত অভিনেতা মমতাজউদ্দিন সাহেবকে দেখিতে পান। ঘরের মধ্যে ঢোল, তবলা, পোশাক এবং একটি নাটকের পাণ্ডুলিপিও তিনি দেখিতে পান, পাণ্ডুলিপির কয়েক পৃষ্ঠা ওলটাইয়া তিনি সমস্ত ব্যাপারটি বুঝিতে পারেন। কিছুক্ষণ পূর্বে বালকটি যখন সেই পথ দিয়া অতিক্রম করিতেছিল, তখন নাটকের মহড়া চলিতেছিল, বালকটিকে ওসি বাড়ি পৌঁছাইয়া দেন। জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়া তাহার নিকট হইতে জানা যায় যে, গোয়েন্দা কাহিনি তাহার অত্যন্ত প্রিয়। মোট ১৮০ খানা মোহন সিরিজ, ১৮৯ খানা সেক্রটন ব্লেক, সবকটি কনান ডয়েল, নীহারগুপ্ত, পাঁচকড়ি দের সবখানা গোয়েন্দাগ্রন্থ সে ইতোমধ্যেই শেষ করিয়াছে। ছেলেটি আগাথা ক্রিস্টির নাম শুনিয়াছে, তবে ইংরেজি জানা না থাকায় এখনও শুরু করিতে পারে নাই।

Content added By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নের উত্তর দাও

আমার মনে হয় পরীটাকে এ বাড়ির দুষ্টু লোকেরা বন্দি করে রেখেছে। আমাদের উচিত হবে এখন একে মুক্ত করা- বলল তমাল। 'কিন্তু এ বাড়িতে কিছু করতে গেলে কপালে অনেক দুঃখ আছে'-হাবিব বলল। 'তার চেয়ে চল আমরা পুলিশে খবর দেই'- তমাল বলল।

হঠাৎ একটা শব্দ শুনে
পায়ে কাঁটা ফোটায়
বই পড়ে যাওয়ায়
মার্বেল দেখতে পেয়ে

লেখক-পরিচিতি

367

শহীদ সাবের ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম এ কে এম শহীদুল্লাহ। তিনি কিশোর বয়স থেকে সাহিত্যরচনা শুরু করেন। তাঁর প্রকাশিত রচনাসমূহ হলো- 'আরেক দুনিয়া থেকে'; ছোটোদের গল্প-সংকলন 'ক্ষুদে গোয়েন্দার অভিযান'; গল্প-সংকলন 'এক টুকরো মেঘ'। তিনি অনুবাদ করেছেন কয়েকটি বিদেশি গল্প ও জীবনীগ্রন্থ। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৩১শে মার্চ রাতের বেলা তাঁর কর্মস্থল 'সংবাদ' অফিসটি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পুড়িয়ে দিলে তিনি অগ্নিদগ্ধ হয়ে শহিদ হন।

Content added By

পাঠ-পরিচিতি ও মূলভাব

459

সৈফুদ্দীন ওরফে খোকা স্কুলের থার্ড ক্লাসের ছাত্র। প্রচুর গোয়েন্দা-কাহিনি পড়ে ফেলেছে সে। একদিন স্কুল থেকে দেরি করে ফেরার সময় একটি পুরোনো বাড়িতে রহস্যজনক ঘটনার সন্ধান পায় সে। দেখে কয়েকজন ব্যক্তি মিলে একজনকে দলিলে স্বাক্ষর করতে বলছে; স্বাক্ষর না করলে আধঘণ্টার মধ্যে তাকে খুন করা হবে। লোকটিকে বাঁচাবার জন্য খোকা দ্রুত থানায় গিয়ে পুলিশে খবর দেয়। থানার ওসি কয়েকজন পুলিশ নিয়ে ছুটে যান সে বাড়িতে। দেখা যায়- সেখানে একটি পরিচিত নাট্যদলের নতুন এক নাটকের মহড়া চলছে। কিন্তু সেটি যে নাটকের মহড়া- খোকা তা বুঝতেই পারেনি। তাই সে মহড়ার একটি দৃশ্যে তার আগেই পড়া গোয়েন্দা-কাহিনির রহস্যের মিল খুঁজে পায়। নিজেকেও গোয়েন্দা-কাহিনির একটি চরিত্র কল্পনা করে নেয় সে। আসলে, বেশি গোয়েন্দা-কাহিনি পড়ার কারণে খোকা বাস্তব জীবনেও সেরকম ঘটনা কল্পনা করে নিয়েছে। আর তাই সৃষ্টি হয়েছে অতিকল্পনায় বিভোর কিশোর খোকার রহস্য-উন্মোচনের ব্যর্থ চেষ্টার কাহিনি।

কোনো বিষয়েই সীমাহীন ঝোঁক বা নেশা কারো জন্য শুভফল বয়ে আনে না, এ সত্যই গল্পটিতে প্রতিফলিত হয়েছে।

Content added By

শব্দার্থ ও টীকা

331

ধড়াস - হৃৎস্পন্দনের প্রবল শব্দ।
সন্তর্পণে - অতি সাবধানে।
অন্তরাত্মা -মন, হৃদয়।
লণ্ঠন - কাচে ঘেরা প্রদীপ।
হতভম্ব - বুদ্ধি কাজ না-করা। প্রয়োজনে কী করতে হবে বুঝতে না-পারা।
রিভলবার - এক হাতের মুঠিতে ধরে চালানো যায় এমন বন্দুক জাতীয় ছোট অস্ত্র।
ভাবান্তর - অন্য ভাব। এখানে ব্যবহৃত হয়েছে ভাবভঙ্গি বা চিন্তার কোনো পরিবর্তন না-হওয়া অর্থে।
নিরুত্তর - উত্তরহীন।
আত্মারাম - প্রাণপাখি, প্রাণ।
ক্রন্ত্রে - ভয়ে
থার্ড ক্লাস - সেকালে থার্ড ক্লাস বলতে এখনকার অষ্টম শ্রেণি বুঝায়।
ডিটেকটিভ - গোয়েন্দা।
সত্যেন ঘোষ - গোয়েন্দা উপন্যাসের একটি চরিত্র।
সাগরেদ - শিষ্য, সহকারী।
কীর্তিকলাপ - কৃতিত্বপূর্ণ কাজ, প্রশংসাযোগ্য কাজ।
ইনসপেক্টর - পরিদর্শক, পুলিশ পরিদর্শককে বোঝানো হয়েছে। ইংরেজি Inspector.
প্রভাতী সংবাদপত্র সকালের খবরের কাগজ।
আদ্যোপান্ত - শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। আদি ও উপান্ত যোগে আদ্যোপান্ত।
ওসি - থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ইংরেজি Officer in-charge.
কনস্টেবল - পুলিশের প্রহরী।
হকচকিয়ে যাওয়া - ঘাবড়ে যাওয়া।
ছানাবড়া - দুধের ছানা দিয়ে তৈরি মিষ্টি। এখানে 'চোখ বড়ো' বা অবাক অর্থে।
খোশগল্প - আমোদজনক বা মজার আলাপ।
মোহন - দস্যু মোহন নামের একটি গোয়েন্দা সিরিজ গল্পের প্রধান চরিত্র।
গুলে খাওয়া - কঠিন ও তরল একাকার করে খেয়ে ফেলা।
হানা দেওয়া - আক্রমণ করা, তল্লাশির জন্য উপস্থিত হওয়া।
গোয়েন্দা-কাহিনি - রহস্য উন্মোচনমূলক কাহিনি। গুপ্তচরবৃত্তির মাধ্যমে রহস্য-উন্মোচনমূলক গল্প।
সেক্রটন ব্লেক - বিখ্যাত গোয়েন্দা কাহিনির লেখক।
কনান ডয়েল - আর্থার কোনান ডয়েল। বিখ্যাত ইংরেজি গোয়েন্দা কাহিনির লেখক।
নীহার গুপ্ত - নীহাররঞ্জন গুপ্ত।
পাঁচকড়ি দে - বাংলা গোয়েন্দা কাহিনির লেখক।
আগাথা ক্রিস্টি - ইংরেজি গোয়েন্দা কাহিনির লেখক।
বিভোর - আত্মহারা, অভিভূত।

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...